অল্প সময়ে পড়ার পদ্ধতি-
পড়াশোনার সময় পায় না প্রায় সব শিক্ষার্থীরই এমন অভিযোগ থাকে। আসলেই কি তাই? নাকি মূল সমস্যা সময়ের সদ্ব্যবহারের অভাব? ‘সময়কে ঠিক মতো গুছিয়ে নিতে পারলে আপনার দ্বারা সবই সম্ভব’—বহু বছর ধরেই এ কথাটি প্রচলিত। কথাটি নেহায়েতই মিথ্যা নয়। সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল টাইম ম্যানেজমেন্ট।
আপনি যদি আপনার সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারেন তবে আপনার সাফল্য আপনার কাছে আপনা আপনি চলে আসবে। কথাটি শুধু শিক্ষার্থীর জন্য নয় বরং অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সময় ব্যবস্থাপনার জন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট ভিত্তিক অনেক কৌশল অবলম্বন করা যায়।
এর মধ্যে একটি হল ‘পোমোডোরো টেকনিক’
১৯৮০ এর শেষ দিকে ফ্রান্সেসকো শিরিলো পদ্ধতিটি সবার কাছে তুলে ধরেন। ফ্রান্সেসকো যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তখন তার কাছে একটি টাইমার থাকতো যা দেখতে অনেকটা টমেটোর মতো। এই টাইমারটি তার কাজকে সময়ের সঙ্গে চলতে সাহায্য করেছিল।
টমেটোকে ইতালিয়ান ভাষায় বলা হয় পোমোডোরো। সেই থেকেই টেকনিকটির নাম হয়ে যায় পোমোডোরো। বর্তমানে টেকনিকটি বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত একটি টাইম ম্যানেজমেন্ট টেকনিক। টেকনিকটি শিক্ষার্থী ছাড়াও আপনি যদি চাকরি করেন তবে সেক্ষেত্রেও কাজে দিবে।
যেভাবে করবেন:
পোমোডোরো করার জন্য আপনার লাগবে শুধুমাত্র একটি টাইমার। টাইমার না থাকলে ঘড়ি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মোবাইল যথা সম্ভব ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ এক্ষেত্রে আপনার মনোযোগ মোবাইলে চলে যেতে পারে। পোমোডোরোয় মূলত ৬ টি ধাপ রয়েছে।
আসুন জেনে নেই ধাপগুলো:
১ম ধাপ: আপনার কাজটি ঠিক করুন। কাজটি হতে পারে পড়াশোনার কোনো টপিক বা আপনার অফিসের কোন কাজ। নিজেকে বিভ্রান্তিতে না রেখে সুনির্দিষ্ট কাজটি নির্ধারণ করুন।
২য় ধাপ: টাইমারটি ২৫ মিনিটের জন্য সেট করুন।
৩য় ধাপ: টাইমারটি চালু করে আপনার কাজটি শুরু করে দিন। টাইমারে ২৫ মিনিট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজটি করতে থাকুন। কাজটি করার সময় অনেক হাবিজাবি বা অন্যান্য চিন্তা আপনার মাথায় আসতে পারে। অপ্রয়োজনীয় চিন্তা বাদ দিন। তবে হতে পারে অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা আপনার মনে পড়ে গেলো যেটি হয়তো পরে করতে হবে। এক্ষেত্রে একটি ছোট কাগজের টুকরোয় ওই কাজের কথাটি চটপট শর্টকাটে লিখে ফেলুন। নোট লেখার পর পুনরায় আপনার কাজে মন দিন। এভাবে টার্গেটের কাজটি করতে থাকুন টাইমার সংকেত না দেয়া পর্যন্ত।
৪র্থ ধাপ: টাইমারে ২৫ মিনিট শেষ হওয়ার সাথে সাথে থেমে যান ও তৎক্ষণাৎ কাজটি বন্ধ করুন। এবার একটি কাগজে একবার ক্রস চিহ্ন আঁকুন। আপনার একটি পোমোডোরো সেশন শেষ হলো।
৫ম ধাপ: এবার পাঁচ মিনিটের জন্য টাইমার সেট করুন। এই পাঁচ মিনিট আপনার বিশ্রামের সময়। এ সময়টিতে কাজের কথা একদম ভাববেন না। প্রয়োজনে চোখ বন্ধ করে থাকুন। পাঁচ মিনিট শেষ হওয়ার পর পুনরায় টাইমারে ২৫ মিনিট সেট করুন ও ২য় ধাপে ফিরে যান। নতুন উদ্যমে কাজটি আবার ২৫ মিনিটের জন্য শুরু করুন।
৬ষ্ঠ ধাপ: এভাবে চারটি ক্রসমার্ক হলে অর্থাৎ চারটি সেশন শেষ হলে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিন। এ সময়টিতে আপনার যা ইচ্ছে তা করতে পারবেন পড়া কিংবা অফিশিয়াল কাজ বাদে। চাইলে এ সময়টিতে প্রিয় কোনো গান শুনতে পারেন, হাঁটতে পারেন অথবা নিশ্চিত করা যেতে পারে এককাপ চা অথবা কফি। এভাবে ৩০ মিনিটের লম্ব বিরতির পর পুনরায় ১ম ধাপ থেকে শুরু করবেন।
কেনো বিশ্রামের প্রয়োজন:
গবেষণায় দেখা গেছে মানুষের মস্তিষ্ক একনাগাড়ে ২৫-৩০ মিনিট মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। এরপর থেকেই মস্তিষ্ক মনোযোগ হারিয়ে ফেলে এবং ক্লান্তি, ক্ষুধা, মানসিক চাপ ও অনাগ্রহ দেখা দেয়। বিশ্রামের সুযোগ থাকায় পোমোডরো পদ্ধতি দীর্ঘ সময় পড়াশুনা করার জন্য যথেষ্ট ইফেকটিভ।
দিতে হবে সম্পূর্ণ মনোযোগ:
মনে রাখতে হবে একটি কাজ চলাকালীন অন্য কোনোকিছু একদম করা যাবেনা। সম্পূর্ণ মনোযোগ ওই কাজেই দিবেন সেশনজুড়ে। তবে যদি কোনো জরুরি কাজ পড়ে যায় যেটি না করলেই নয়, সেক্ষেত্রে ওই সেশনটি বাতিল করে দিন। আপনার জরুরি কাজটি শেষ করে পুনরায় ১ম ধাপ থেকে শুরু করবেন। এক্ষেত্রে অর্ধেক কাজের জন্য ক্রসমার্ক দিবেন না। ক্রসমার্ক দেয়ার শর্ত হলো সম্পূর্ণ ২৫ মিনিট শেষ করতে হবে। প্রয়োজনে একটি ছোটখাটো খাতা বানিয়ে ক্রসমার্কের জন্য অগ্রিম ঘর তৈরি করে রাখতে পারেন সময়ভিত্তিক। যদি আপনার কাজটি ২৫ মিনিট আগে শেষ হয়ে যায় তবে এ সময়ের মধ্যে পরবর্তী কাজটি সম্পর্কে পরিকল্পনা করবেন।
পুরো বিশ্বেই বহুল জনপ্রিয় এ পোমোডোরো পদ্ধতি। পদ্ধতিটির মাধ্যমে আপনার সময়ের অভাবে পড়ে থাকা কাজ নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে। এ পদ্ধতি আপনাকে সাহায্য করবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে। কথাগুলো যদি বিশ্বাস না হয় তবে একটিবার চেষ্টা করেই দেখুন না!