প্রিয় ভাই এবং আপুরা, আশা করি সবাই ভালো আছেন।
ইতোমধ্যেই আপনারা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হবার ট্র্যাকে উঠে গেছেন।এবার আপনাদের পেরোতে হবে সমাজ থেকে আসা বিভিন্ন জটিল প্রশ্নের বাধা,যার সঠিক উত্তর দিতে না পারলে সবার সামনে হতে হবে অপমানিত, লাঞ্ছিত, হেয়-প্রতিপন্ন।হ্যাঁ,হ্যাঁ, ২০২০-২১ সেশনের নতুন ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীদেরকেই বলছি।
আজ এমনই কিছু সাধারন প্রশ্ন এবং তার যৌক্তিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব,যাতে সবার সামনে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে প্রশ্নগুলোর দাঁত-ভাঙ্গা(দুঃখিত, একটু কড়াভাবে বলে ফেললাম) জবাব দিতে পারেন।
প্রশ্ন-১. আপনি কিসে পড়েন
আমি পলিটেকনিকে পড়ি।
আমি ডিপ্লোমা ইন সিভিল(টেকনোলজির নাম) ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ছি, ৮ম পর্ব।
.
প্রশ্ন-২. আপনি কোন কলেজে পড়েন
ময়মনসিংহ পলিটেকনিকে।
ভাইয়া/আংকেল, আমি কলেজে পড়ি না, আমি ইনস্টিটিউটে পড়ি। কলেজ এবং ইনস্টিটিউটের মাঝে পার্থক্য হলো, কলেজে শুধু মাত্র তাত্ত্বিক পাঠের মাধ্যমে পাঠদান করা হয়। আর যে প্রতিষ্ঠানে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি বেশীরভাগই ওয়ার্কশপ বা ল্যাবে যন্ত্রপাতির ব্যবহার করে ব্যবহারিক/হাতেকলমে শিক্ষা প্রদান করা হয় তাকে ইনস্টিটিউট বলা হয়।
.
প্রশ্ন-৩. আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে পড়েন
ময়মনসিংহ পলিটেকনিক।
ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
.
প্রশ্ন-৪. আপনি কোন বিষয়ে পড়েন
সিভিল (এর কোন স্বতন্ত্র অর্থ নেই)
সিভিল টেকনোলজি(পুরকৌশল)।
.
প্রশ্ন-৫. আপনাদের ডিপ্লোমার মান কিসের সমান, এইচ.এস.সি নাকি ডিগ্রি
এইচ.এস.সি অথবা ডিগ্রি (না জেনে আন্দাজে বলে ফেলা)
দেখুন ভাই/আংকেল, এইচ.এস.সি এর গ্রেড/ক্রেডিট ভ্যালু হচ্ছে ১২ আর ডিগ্রির গ্রেড/ক্রেডিট ভ্যালু হচ্ছে ১৬। কিন্তু আমাদের ডিপ্লোমার গ্রেড/ক্রেডিট ভ্যালু হলো ১৪। তাই ডিপ্লোমার মান অন্যগুলোর সাথে তুলনা করাটা বোকামি, মানের দিক থেকে ডিপ্লোমাকে কারো সাথে তুলনা করা যায় না, এটি স্বতন্ত্র।
.
প্রশ্ন-৬. পলিটেকনিকে ভর্তি হলেন কেন? পলিটেকনিকে তো খারাপ স্টুডেন্টরা পড়ে..
সবার দেখা-দেখি হলাম।অমুক বড় ভাই বললো তো তাই হয়ে গেলাম আর কি।
ভাই/আংকেল, কিছু মনে করবেন না, এটা আসলে সমাজের ভুল ধারনা। একটু খোঁজ নিলেই দেখতে পারবেন, এস.এস.সি তে জি.পি.এ ৪.৮০-৫.০০ না থাকলে কেউ ভাল কোন টেকনোলজিতে চান্স পায় না। সিভিল, ইলেক্ট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল এই টেকনোলজি গুলোতে এ প্লাস না পেলে চান্স হবার নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না।কাজেই পলিটেকনিক খারাপ স্টুডেন্টদের জন্য না।
.
প্রশ্ন-৭. অমুকের পোলা/ভাইস্তা তো ডিপ্লোমা করে বাড়ীতে বসে আছে,ডিপ্লোমা করে মারাত্নক ভুল করলেন জীবনে।
অমুক বড় ভাইয়ের কথাতেই তো ভর্তি হলাম, দেখি কপালে কি আছে(মাথা নিচে)!!
ভাই/আংকেল, দেখুন ডিপ্লোমা করলেই চাকরী পাবেই সেরকম কোন কথা নয়, মূলত চাকরী হয় যোগ্যতাবলে। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন যে ডিপ্লোমা করে বাড়ীতে বসে আছে, সে নিশ্চয়ই রেফার্ড(ফেইল) খেয়ে খেয়ে পাশ করেছে আর নয় কোন রকমে ২.০০ পেয়ে পাশ করে একটা ডিপ্লোমা নামধারী সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে বসে আছে। তাছাড়া দেশে এমন অনেক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের শেখানোর মতো না আছে কোন শিক্ষক,না আছে মানসম্মত ল্যাব।কি শিখবে ডিপ্লোমা করে?? সবশেষ পরিনতি এটাই।একটু কষ্ট করে খোঁজ নিয়ে দেখেন ভাল ছাত্র,যাদের সি.জি.পি.এ ৩.৫০+ তারা কিন্তু আজ বসে নেই।
..
প্রিয় ভাই/আপুরা অনেক কথা বলে ফেলেছি,,আশা করি আজকের পর থেকে কোন ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট আর কারো কাছে ছোট হবে না, কলেজপড়ুয়া বন্ধুদের আড্ডায় আর সংকোচ বোধ করবে না।
আসুন ডিপ্লোমা পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সমাজের মানুষের চিন্তা-ভাবনা পাল্টে দেই। বুক ফুলিয়ে নিজের গর্বের পরিচয়টা তুলে ধরুন সবার সামনে।
সকলের জন্য শুভ কামনা রইল।