কম্পিউটার ভাইরাস নিয়ে যতো কথা...!
সোহাগ, আমার ছোট বেলার বন্ধু। এইচ. এস. সি পাশ করার পর ও মেডিকেলে আর আমি কম্পিউটার সাইন্সে চলে আসি। একদিন মজা করে ওকে প্রশ্ন করলাম, ভাইরাস কি? ও উত্তর করল- নিউক্লিক এসিড সমন্বয়ে গঠিত অকোষী প্রাণী, যা প্রাণী দেহের বাহিরে নিজেদের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে পারে না। আর আমি বললাম- এটা একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম। আসলে দুটোই ঠিক। তবে আজকে আমরা যে ভাইরাস নিয়ে আলোচনা করবো সেটি হচ্ছে- কম্পিউটার ভাইরাস।
ভাইরাস এমন একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা ইউজারের পারমিশন ছাড়া বা তার অজান্তে কোনো একটা এক্সিকিউটেবল ফাইলের সাথে নিজের কোড অ্যাট্যাচ্ড করে নেয়।
আর সেই ভাইরাস অ্যাফেক্টেড এক্সিকিউটেবল ফাইলটি যখন এক্সিকিউট হয়, তখন ভাইরাস কোডটিও এক্সিকিউট হয়। আর এ সম্পূর্ণ ব্যাপারটি ঘটে ইউজারের অজান্তে।
প্রকারভেদ
ভাইরাস এর চরিত্রগত দিক থেকে বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। আবার অনেক ভাইরাসের বিভিন্ন ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যাই হোক সমস্ত ভাইরাসই কোনো না কোনো ভাবে কোনো না কোনো ফাইল বা অপারেটিং সিস্টেমের কোনো অংশ অ্যাফেক্ট করে। আরে এ দিক থেকে বিবেচনা করলে সমস্ত ভাইরাস প্রজাতিকে দুটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা যায়। এদের প্রথম ক্যাটাগরিটি বিবেচনা করা হয় “এরা কোনো ধরনের ফাইল ইনফেক্ট করছে” তার ভিত্তিতে। তবে আমরা এখানে ভাইরাস প্রজাতিকে আর একটি নতুন প্রজাতিতে বিভক্ত করতে পারি। আর সেটি হচ্ছে Worms (Write once read many) ।
ফাইল ইনফেক্টিং সিস্টেম
ভাইরাস কিভাবে ফিয়াইল ইনফেক্ট করে, এ প্রশ্নের উপর ভিত্তি করে ভাইরাস গুলিকে আবার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা যায়। এগুলো হচ্ছেঃ
1. Polymorphic Viruses
2. Stealth Viruses
3. Fast and Slow Viruses
4. Sparse Infectors
5. Armored Viruses
6. Multipartite Viruses
7. Cavity (Spacefiller) Viruses
8. Tunneling Viruses
9. Camouflage Viruses
10. NTFS ADS Viruses
Virus Dropper নামে এখানে আরো একটি ক্যাটাগরি চিহ্নিত করা যায়, যারা নিজের ভাইরাস না হলেও সিস্টেমে ভাইরাস ইনফেক্টিং এ সাহায্য করে।
ইনফেক্টিং আইটেমস
ভাইরাস কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম ও বিভিন্ন ধরনের ফাইল ইনফেক্ট করে। এগুলো হচ্ছেঃ
1. System Sector
2. File
3. Macro
4. Companion
5. Cluster
6. Batch File
7. Source Code
8. Visual Basic Worms
ভাইরাসের ইতিহাস
১৯৮৬ সালের গোড়ার দিক। Basit এবং Amjad ফ্লপিডিস্কের বুট সেক্টরে একটা এক্সিকিউটেবল কোড রেখে এটি নিয়ে পরীক্ষা চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে দেখা গেলো ফ্লপি ডিস্কটি দিয়ে যতবারই কম্পিউটার বুট করা হয় ততবারই কোডটি রান করছে। এবার তারা ঐ কোডটি কে তাদের প্রোগ্রামের সাথে অ্যাটাচ্ড করে এক্সিকিউট করলেন। এতে দেখা গেল এক্সিকিউটেবল কোডটি মেমোরিতে স্থান করে নিয়েছে এবং ফ্লপিড্রাইভে অন্য কোনো ফ্লপি এক্সেস করার সাথে সাথে ঐ ডিস্কটিতে ঐ এক্সিকিউটেবল কোডটির একটি কপি তৈরি হচ্ছে। এর নাম রাখা হলো ভাইরাস। কিন্তু এটি শুধু মাত্র ৩৬০কিলোবাইট ফ্লপি ডিস্ককে ইনফেক্ট করতো।
১৯৮৮ সালে মোটামুটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো ভাইরাস লেখা এবং এ সালেই বের হলো এন্টিভাইরাস নামক ভাইরাস ডিটেক্ট এবং ক্লিন করার প্রোগ্রাম। এ বছরই এন্টিভাইরাস কোম্পানীগুলি তাদের এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামগুলি মার্কেটিং শুরু করে। যদিও প্রাথমিকভবে প্রচারই ছিল তাদের প্রধান লক্ষ্য। এ সময় এ প্রোগ্রামগুলি তারা অতি অল্পদামে (৫ থেকে ১০ ডলার) বা কখনো কখনো ফ্রি দিতো। আর এভাবেই শুরু হলো ইঁদুর বেড়ালের যুদ্ধ। এক দিকে তৈরি হতে থাকে নতুন নতুন ভাইরাস আর অন্যদিকে এন্টিভাইরাসের আপডেট ভার্সন।
১৯৮৯ সাল। ঘটনা মোড় নিলো অন্য দিকে। নাম পরিচয় বিহীন একজন Fu Manchu ভাইরাস পাঠালেন বিট্রেনের একজন ভাইরাস রিসার্চারের কাছে এবং আরো ৪০৫ টি ভাইরাস পাঠানো হলো অন্য একদল ভাইরাস রিসার্চার এর কাছে। এ সময় বিট্রেনের একজন ভাইরাস রিসার্চার ভয়ঙ্কর এক ভাইরাস লিখে পাঠালেন আরএক ব্রিটিশ ভাইরাস রিসার্চার এর কাছে। শুরু হলো ভাইরাস তৈরির এক ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা। এ সময়ই প্রথম বুলগেরিয়ানরা ও পরে রাশিয়ানরা ভাইরাস লেখায় নিজেদের অগ্রযাত্রা আরম্ভ করে। ঐ বছর মার্চের দিকে হল্যান্ডে তৈরি হলো আরো এক ধরনের ভাইরাস। একজন ডাচ্ (যে নিজেকে Fred Vogel নামে পরিচয় দিল) একজন ব্রিটিশ ভাইরাস রিসার্চারের সাথে যোগাযগ করে জানালেন যে সে তার হার্ডডিস্ক জুড়ে ভাইরাস দেখতে পেয়েছে। ভাইরাসটি নিজেকে Data Crime virus নামে পরিচয় দিচ্ছে। সে আরো দঃশ্চিন্তা গ্রস্ত এই ভেবে যে ভাইরাসটি নাকি পরবর্তী মাসের ১৩ তারিখে আক্রমণ করবে। শুরু হলো রিসার্চ। রেজাল্ট এলো এ ভাইরাসটি ১২ই অক্টোবরের পরে যে কোনো দিন লো লেভেল ফরমেটেড হার্ডডিস্কের জিরো সিলিন্ডারে আক্রমণ করে এর File Allocation Table নষ্ট করে ফেলতে পারে।
১৯৯০ সাল। Mark Washburn একদিন Vienna ভাইরাস নিয়ে গবেষণার এক পর্যায়ে Polymorphic ভাইরাস নামে নতুন একটি ভাইরাস তৈরি করেন, যেটি ডিটেক্ট করতে এন্টি ভাইরাস ভেন্ডরগুলিকে মোটামুটি হিমসিম খেতে হয়।
এ বছরই Symantec কর্পোরেশন Norton Antivirus এর অগ্রযাত্রা শুরু করে। এর পর থেকে প্রতিদিন একদিকে যেমন ভাইরাসের সংখ্যা বাড়তে থাকে তেমনি অন্যদিকে এন্টিভাইরাস কোম্পানীগুলিও তাদের এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামগুলি আপডেট করতে থাকে। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে যেখানে ভাইরাসের সংখ্যা ছিল ২০০ থেকে ৩০০ সেখানে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ১০০০ এ। আবার ১৯৯৬ সালে যেখানে ভাইরাসের সংখ্যা ছিল ১০০০০ সেখানে ১৯৯৮ সালে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ২০০০০ এবং ২০০০ সালে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০০০০ এ। এভাবে প্রত্যেক দিনই বাড়ছে ভাইরাসের সংখ্যা।
ইনফেক্টেড সিম্পট্ম ভাইরাস ইনফেক্টেডে আপনার সিস্টেমে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপসর্গ গুলি হচ্ছে-
১. আপনার সিস্টেমটি স্লো হয়ে যেতে পারে।
২. সিস্টেমে ঘন ঘন ইলিগাল অপারেশন ম্যাসেজ দিতে পারে।
৩. হার্ডডিস্কে ফ্রি স্পেসের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
৪. ভাইরাস অ্যাফেক্টেড ফাইলটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৫. হার্ডডিস্কের পার্টিশন ভেঙ্গে যেতে পারে।
৬. কখনো কখনো ভাইরাসটি তার পরিচয় সূচক ম্যাসেজ দেখাতে পারে।
৭. এমনকি সিস্টেমের বায়োসটি পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ভাইরাস প্রোটেকশন
ভাইরাস প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধই শ্রেয়। কারণ ভাইরাস আপনার সিস্টেমে একবার প্রবেশ করলে এর কার্যক্রম শুরু না করলেও নিজেকে আপনার সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলের সাথে অ্যাটাচড করতে থাকে। আর এ ভাইরাস দুই ভাবে আপনার সিস্টেমে আত্নপ্রকাশ করতে পারে। এদের প্রথমটি হচ্ছে অ্যাটাস্টম্যান্ট এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে ইনফেক্ট।
সাধারনত এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামই এর একমাত্র প্রতিরোধক বা প্রতিশেধক। আর এ ধরনের এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম আপনার সিস্টেমে অ্যাকটিভ রেখে আপনার সিস্টেমকে ভাইরাসের হাত থেকে মুক্ত রাখতে পারেন। আর আপনার সিস্টেমটি যদি পূর্বেই ভাইরাস এফেক্টেড হয়ে থাকে তবে দেরি না করে আজই লাষ্ট আপডেটেড এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম দ্বারা আপনার সিস্টেমটি স্ক্যান করে নিন।
লেখকের নাম – আরিফুজ্জামান চঞ্চল