আধুনিক বিশ্বে যে দেশ কম্পিউটার বা ইনফরমেশন টেকনোলজিতে যত উন্নত, সে দেশ ততই বেশি সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী। গত দশকে থেকে আমাদের দেশেও কম্পিউটারাইজেশনের ক্ষেত্রে বিপ্লবী পরিবর্তন শুরু হয়েছে। শিল্প, সাহিত্য, ব্যাংক, বীমা, শিল্প ও কারখানাগুলিতে অধিক হারে কম্পিউটারের ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যে কোন ধরনের ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান বা শিল্পে তথ্য সংরক্ষণ ও বিভিন্ন কর্মকান্ড সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য কম্পিউটার অত্যাবশ্যক। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কম্পিউটারের প্রতি নির্ভরশীলতা বাড়ছে। যার প্রেক্ষিতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যপক কর্মসংস্থানের সৃ্ষ্টি হচ্ছে।
🌟ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংঃ
কম্পিউটার প্রকৌশল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সেই শাখা যা কম্পিউটারের সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যারের গবেষণা এবং বিকাশ নিয়ে কাজ করে। একে বলা যেতে পারে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সাইন্স এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সামষ্ঠিক জ্ঞান।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এই শাখায় আলোচিত আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- মাইক্রোকন্ট্রোলার, মাইক্রোপ্রসেসর, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টেস্টিং, সার্কিট ডিজাইন, হার্ডওয়্যার এবং নেটওয়ার্কিং।
⭐কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংঃ
-এ ডিপ্লোমা সম্পন্ন করার পর শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সফটওয়্যার কিংবা হার্ডওয়্যার এঞ্জিনিয়ারিং-এ ক্যারিয়ার বেছে নিতে পারে উপযুক্ত দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে।
⭐কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং- ডিপ্লোমা কোথায় করবেনঃ
দেশের বিভিন্ন জেলায় ৪৯ টি সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং –এ ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন- ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, BCI – তেও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা করা যায়।
⭐ভর্তির যোগ্যতাঃ
চার বছর মেয়াদি আট সেমিস্টারের এই কোর্সে ভর্তি হতে হলে প্রার্থীকে কমপক্ষে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার উত্তীর্ণ হতে হবে। যে কোন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ড নীতিমালা দিয়ে থাকে। সাধারণত সরকারি পলিটেকনিকের ক্ষেত্রে নূনতম ৩.৫ তবে গণিতে এবং বিজ্ঞানে ভাল থাকতে হবে এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে আমাদের জানা নেই।
⭐ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এর মানঃ
ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং হল একটি আন্ডার গ্রাজুয়েশন কোর্স। যদিও এর মান এইচ এস সি- এর তুলনায় বেশি, কিন্তু এটা গ্রাজুয়েশনের সমান না।
⭐ একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্বঃ
একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার-এর মধ্যে যেকোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে পারে। কম্পিউটার প্রকৌশলীদের প্রধান কাজ হল কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার অথবা সফটওয়্যারের ডিজাইন, পরিকল্পনা, যাচাইকরণ এবং তত্ত্বাবধান করা।
কম্পিউটার প্রকৌশলীদের মধ্যে কেউ কেউ প্রধানত কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের সিস্টেম ও অবকাঠামো নির্মাণে কাজ করে এবং অন্যান্যরা সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করে যেটা কিনা পুরো সিস্টেমের মধ্যে ব্যবহার করে কোন কাজ সম্পন্ন করা হয়। কম্পিউটার প্রকৌশলের ক্ষেত্র হার্ডওয়্যার প্রকৌশলী এবং সফ্টওয়্যার ডেভেলপার উভয়ের জন্য ভিন্ন চাকরির ক্ষেত্র থাকলেও অনেক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়াররা কোন একটি প্রতিষ্ঠানে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার উভয়ের সমন্বিত সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে পারে।
একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার যেসব পদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন সেগুলো হল-
• সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
• হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
• প্রোগ্রামার
• নেটওয়ার্কিং ইঞ্জিনিয়ার
• নেটওয়ার্কিং ইঞ্জিনিয়ার
• সফটওয়্যার টেস্টার
• ওয়েব ডিজাইনার
• অ্যাপ ডেভ্লপার
• প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার
• টেকনিক্যাল রাইটার
• সিস্টেম এনালিস্ট
• ডাটাবেস ইঞ্জিনিয়ার
• ক্লাউড আর্কিটেক্ট
⭐কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের কর্মক্ষেত্রঃ
বর্তমানে বাংলাদেশে ডিজিটালাইজেশনের কারনে সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা, সেরকম কিছু প্রতিষ্ঠান হল-
• পাওয়ার প্লান্ট, পিডিবি, পল্লী বিদ্যুৎ, ডেসকো, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান।
• ইনফরমেশন এ্যান্ড কম্যুনিকেশন টেকনোলজি সেক্টর।
• সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিগুলোতে মেনটেইন্যান্স ও আইটি অফিসার হিসেবে।
• সৌর বিদ্যুৎ ও পরমাণু গবেষণাকেন্দ্র।
• শিল্প-কারখানা, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি।
• ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস সেক্টর।
• কম্পিউটার ইন্ডাস্ট্রি।
• টেলিকম্যুনিকেশন সেক্টর।
• ই-কমার্স সেক্টর।
• বায়োটেকনোলজি সেক্টর।
• বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া।
• সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানসমূহ।
⭐উচ্চ শিক্ষাঃ
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা সম্পন্ন করার পর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে সকল সেক্টরে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ আছে সেগুলো হল-
• ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস সেক্টর।
• কম্পিউটার ইন্ডাস্ট্রি।
• টেলিকম্যুনিকেশন সেক্টর।
• ই-কমার্স সেক্টর।
• বায়োটেকনোলজি সেক্টর।
• বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া।
• সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানসমূহ।
⭐উচ্চ শিক্ষাঃ
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা সম্পন্ন করার পর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে সকল সেক্টরে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ আছে সেগুলো হল-
• কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং
• B.sc ইনফরমেশন অ্যান্ড কম্পিউটার টেকনোলজি
• B.sc ইনফরমেশন অ্যান্ড কম্পিউটার টেকনোলজি
• B.sc ইনফরমেশন সাইন্স
• B.sc ডাটা ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি
• B.sc কম্পিউটার সাইন্স
• সফটঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং
• মাল্টিমিডিয়া টেকনোলজি
এছাড়া দেশের বাইরেও এসকল বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করা সম্ভব।
⭐ক্যারিয়ার হিসেবে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংঃ
আজকাল বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলি যেমন পাওয়ার সেক্টর, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, উৎপাদন ইত্যাদি কম্পিউটারের উপর নির্ভরশীল। এই সকল প্রতিষ্ঠান গুলোতে কম্পিউটার সিস্টেমের উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য কম্পিউটার প্রকৌশলীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব জায়গাতেই কমপিউটার নির্ভর ব্যবস্থাপনা। ফলে প্রতিটি দফতর, শিল্পে আইটি এক্সপার্ট এবং কম্পিউটার প্রকৌশলী অত্যাবশ্যক হয়ে দাড়িয়েছে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা হোল্ডারা সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারে।
তবে, বর্তমানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় বেশি। সফটওয়্যার সাধারনত হার্ডওয়্যারের তুলনায় ঘনঘন আপডেট হয়ে থাকে, এটিই সম্ভাব্য কারন। একই হার্ডওয়্যারে কাজ করার জন্য সফটওয়্যার প্রোগ্রামের বেশ কয়েকটি সংস্করণ ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে হার্ডওয়্যারগুলো ভালভাবে কাজ করে থাকলে প্রতিষ্ঠান হার্ডওয়ার আপগ্রেড করার জন্য তেমন কোন উদ্যোগ নেয় না।
আউটসোর্সিং- এর মাধ্যমে আয় ইদানিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যেখানে কম্পিউ্টার সম্পর্কিত সেবা একটি বড় স্থান দখল করে আছে।
এছাড়া আত্ম কর্মসংস্থানের জন্য কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং খুবই সম্ভাবনাময় সেক্টর। একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমাধারী স্বাধীন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারেন অথবা নিজের হার্ডওয়্যার বিক্রয় ও সার্ভিসিং-এর প্রতিষ্ঠান খুলতে পারেন।
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের আয়
ডিপ্লোমা করার পর পরই যদি কেউ চাকরিতে ঢুকতে চায়, তবে এই লেভেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেতন হতে পারে ২০-২৫ হাজার টাকা।
তবে যদি হার্ডঅয়্যার বা সফটঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর উপর অ্যাডভান্স লেভেলের ডিগ্রি এবং অভিজ্ঞতা থাকে তবে বেতন অনেক ভাল হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে যা আরও অনেক বেশি হয়ে থাকে।
কম্পিউটার টেকনোলজি উন্নতির ফলে আমাদের দেশে বহুমুখী কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে। তথ্য প্রযুক্তি তথা কম্পিউটার প্রকৌশলে শিক্ষিত তরুণদের অনেকেই দেশ ও বিদেশে সম্মানজনক পেশায় জড়িত আছে। এর দেশে শিক্ষিত বেকার সমস্যা কিছু্টা হলেও লাঘব হয়েছে। তবে, প্রযুক্তি এত দ্রুত গতিতে বিকশিত হচ্ছে যে কম্পিউটার প্রকৌশল ক্ষেত্রটি অনেকগুলি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কম্পিউটার প্রকৌশলীকে এই ধরনের বিকাশের সাথে নিজেকে আপ টু ডেট রাখতে হবে। সংক্ষেপে, ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়্যারিং- তাদের জন্য যারা অবিরাম শেখার জন্য প্রস্তুত।
তথ্যসূত্র : Polytechnicbd.com এ প্রকাশিত।