শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০২০

নিরাপদ থাকুন ইন্টারনেটে...!

নিরাপদ থাকুন ইন্টারনেটে...!

নিরাপদ থাকুন ইন্টারনেটে...!


আপনি জানলে হয়তো অবাক হবেন বাংলাদেশে এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা সরকারি হিসাবে সাত কোটিরও বেশি। ইন্টারনেটের সুবিধা আমাদের জীবন ধারাকে সহজ করেছে ঠিকই, কিন্তু এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারে ঝুঁকির বিষয়গুলো সম্পর্কে না জানার কারণে অনেকেই আজকাল নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। সত্যি বলতে আজকের দিনে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সবচেয়ে মূল্যবান। গুঞ্জন রয়েছে আমেরিকার পার্লামেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পিছনে ব্যাক্তিগত তথ্য চুরির এক অনবদ্য অবদান রয়েছে। ভেবেই দেখুন আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য কতো টা মূল্যবান !
সেই ভিত্তিতেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সফটওয়্যার, অ্যাপ তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, আর এগুলোর মাধ্যমে কখনো সরাসরি, কখনো কৌশলে আবার কখনো প্রতারণার মাধ্যমে তথ্য চুরির কাজটি করা হচ্ছে। আর এই কাজটি করছে ইন্টারনেটভিত্তিক প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই। সম্প্রতি দেশের অন্যতম শীর্ষ রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাও পর্যন্ত তার অ্যাপসের মাধ্যমে ব্যবহার কারীদের সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছে। যা কিনা জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি স্বরুপ হয়ে দাড়িয়েছে। এদেশের সাধারণ মানুষ কেবলমাত্র ইন্টারনেটের বৈশিষ্ট্য দেখেই মুগ্ধ, ভেতরে কী চলছে তা জানার চেষ্টাটুকুও কেউ করেনা।
আপনি যখন কোন অ্যাপ ইন্সটল করেন তখন আপনার ব্যাক্তিগত তথ্যগুলো কী কী কাজে ব্যবহার করা হবে, তার বর্ণনা দেয়া থাকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নীতিমালায়। এই ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত হলেই কেবল সেখানে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা এবং অ্যাপটি ব্যবহার করা উচিত। তবে বেশির ভাগ ব্যবহারকারী এই দীর্ঘ নীতিমালা পড়েন না এবং না পড়েই অনুমতি দিয়ে দেন। যার ফলে  ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুব সহজেই আপনার মহা মূল্যবান ব্যাক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে পারে। এই ছোটখাটো ব্যাপারগুলোতে সবার সাবধান হওয়া উচিত। বিশ্বাসযোগ্য ডেভেলপার হলে এক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়া যায়, কিন্তু আপনি যখন অপরিচিত কোনো ডেভেলপারের অ্যাপ ব্যবহার করবেন, তখন এই ছোট ব্যাপারে দৃষ্টি না দিলেই নয়। যাই হোক, ইন্টারনেটের নিরাপত্তা রক্ষার্থে বেশ কিছু ব্যাপারে সচেতন থাকলেই যথেষ্ট, সেই সচেতন হওয়ার ব্যাপারগুলো নিয়েই চলুন জানা যাক আজ।

ব্রাউজার নির্বাচনে সতর্কতা:
ইন্টারনেট ভিত্তিক তথ্য ও সেবা পাওয়ার জন্য যেহেতু ওয়েব ব্রাউজার অধিক ব্যবহার করা হয় তাই ওয়েব ব্রাউজার এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নিরাপদে ব্যবহার করা অতি জরুরী। কিন্তু কম্পিউটার এর অপারেটিং সিস্টেমের সাথে যে ওয়েব ব্রাউজার গতানুগতিক ভাবে দেয়া থাকে অথবা আমরা যে ওয়েব ব্রাউজার ইনস্টল করি, সাধারণত তাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা থাকে না। গুগল ক্রোম বা ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারের পাশাপাশি আরও বহু ব্রাউজিং সফটওয়্যার পাওয়া যায়। সেগুলো দেখতে আকর্ষণীয় হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ওয়েব ব্রাউজার গুলোই আপনার সব তথ্য হাতিয়ে নেয়। তাই ব্রাউজার নির্বাচনের সময় সতর্ক হোন।

ফ্রি প্লে-স্টোর অ্যাপ ব্যাবহারে সতর্কতা:
অনেকেই প্লে-স্টোর থেকে ডাউনলোড করেন ফ্রি অ্যাপস। এই ধরণের অ্যাপগুলির ৯০ শতাংশই গুগলের সঙ্গে শেয়ার করে থাকে ইউজারদের তথ্য। যেটির জন্য অবশ্য নেওয়া হয় না ইউজারদের সম্মতি৷ যদিও বিষয়টিকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে গুগল। তথ্য শেয়ারিং কান্ডের সঙ্গে শুধুমাত্র গুগলই জড়িত নয়৷ ৪৩ শতাংশের মত অ্যাপ ফেসবুকের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করে থাকে। বেশ কিছু অ্যাপস রয়েছে যেগুলি ট্যুইটার, আমাজন, মাইক্রোসফটের মত নামিদামি সংস্থাগুলির সঙ্গে ইউজারদের গোপন তথ্য শেয়ার করে থাকে। তথ্য চুরি ও শেয়ার করার ঘটনা প্রথম নয়। এর আগেও একইভাবে তথ্য চুরি হয়েছে৷ ইদানিং, সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে সামনে আসছে বিষয়টি। আর, সেখান থেকেই নিজের তথ্য কতটা সুরক্ষিত সে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হচ্ছেন ইউজাররা। তাই, প্লে-স্টোর থেকে ফ্রী অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে সর্তক থাকুন।

পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যাবহারে সতর্কতা:
পাবলিক ওয়াই-ফাই সংযোগ ব্যবহারে সতর্ক হোন। আমরা অনেকেই এমন যে, কোথাও পাবলিক ওয়াই-ফাই পেলেই সাথে সাথে স্মার্টফোনকে সংযুক্ত করে ফেলি। এই অভ্যাসটি  পরিবর্তন করুন অতিসত্ত্বর। আর তা না হলে এমন পাবলিক ওয়াই-ফাই থেকে হ্যাকিং বা ম্যালওয়্যার আক্রান্তের শিকার হতে পারেন আপনিও। সাইবার অপরাধীদের অনেকে ফ্রি এমন সংযোগের মাধ্যমে হ্যাকিং বা ভাইরাস ছাড়ানোর কাজটি করে থাকে। তাই অজানা কোনো ওয়াই-ফাই সংযোগের সঙ্গে ফোন যুক্ত করা উচিত নয়।

ফেসবুক থার্ড-পার্টি অ্যাপ ব্যাবহারে সতর্কতা:
‘আপনি মেয়ে হলে দেখতে কেমন হতেন ?’, ‘৫০ বছর পর আপনাকে কেমন দেখাবে ?’ এমন নামে প্রতিদিনই নতুন নতুন অ্যাপ প্রকাশ পায় ফেসবুকে। আমরা অনেকেই অ্যাপটি নির্ভরযোগ্য নয় জেনেও নিকছ আনন্দের জন্য অ্যাপটিতে প্রবেশ করি। শুধু প্রবেশই করিনা টাইমলাইনে শেয়ার করে বন্ধু তালিকার সবাইকেও দেখার সুযোগ করে দেই। বন্ধু তালিকারও অনেকেই নিকছ আনন্দের জন্য অ্যাপটিতে প্রবেশ করেন। এসব অ্যাপ তৈরির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নেওয়া। আর তাই অ্যাপে বলা হয়, আপনি যত বেশি তথ্য সংযোজন করবেন, এই ভবিষ্যদ্বাণী তত বেশি নির্ভুল হবে। সেই আশাতে আমরা আরও তথ্য সংযোজনের চেষ্টা করে থাকি। যার মাধ্যমে এসব অ্যাপ হাতিয়ে নেয় আপনার মহা মূল্যবান ব্যাক্তিগত তথ্য। তাই এসব ফেসবুক অ্যাপে প্রবেশ থকে নিজেকে বিরত থাকুন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং:
 আমরা বিপুল পরিমাণ তথ্য ছড়িয়ে দিই ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু আমরা জানিও না আমাদের ব্যাক্তিগত তথ্য চুরি করার জন্য প্রতিনিয়তই চেষ্টা করে যাচ্ছে বহুজন। তাই প্রায়ই অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে হ্যাক হওয়া এসব তথ্য কী কাজে লাগবে ?
যুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফেসবুক থেকে হ্যাকড হওয়া তথ্য খুবই মূল্যবান। ফেসবুক হ্যাক করে তথ্য হাতিয়ে নিতে পারলে তা থেকে অর্থ আয় করে সাইবার দুর্বৃত্তরা। এসব তথ্য তারা ডার্ক ওয়েবে বিক্রি করে দেয়।
বিশেষ কিছু সফটওয়্যারের মাধ্যমে এ ধরনের ডার্ক ওয়েবে ঢুকে ওই তথ্য তারা কেনাবেচা করে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফেসবুক থেকে চুরি করা তথ্য কাজে লাগিয়ে পরিচয় প্রতারণা (আইডেনটিটি থেফট) বা ব্ল্যাকমেলের মতো ঘটনা ঘটাতে পারে দুর্বৃত্তরা।
ডার্ক ওয়েবে বিটকয়েনের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রায় বিক্রি হয় এসব অ্যাকাউন্টের তথ্য। তথ্যের গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে একেকটি অ্যাকাউন্ট বিক্রি হয় ৩ থেকে ১২ মার্কিন ডলার দামে। ফেসবুক থেকে যে পরিমাণ তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা এককভাবে বিক্রি করলে এর দাম হতে পারে ৬০ কোটি মার্কিন ডলারের কাছাকাছি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সনিকওয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিল কনার বলেন, ডার্ক ওয়েবে ব্যক্তিগত তথ্য খুবই মূল্যবান। কোনো প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এসব তথ্য নেওয়া হলে তা আরও গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাজ্যের মানি গুরু নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ভাষ্য, হ্যাকিংয়ের ঘটনার পর অনেক তথ্য ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব তথ্য কিনে তা বিজ্ঞাপন দেখানোর কাজে ব্যবহার করে থাকে।

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০২০

অনলাইন মিটিংয়ে জুম অ্যাপ ব্যবহার করবেন যেভাবে..!

অনলাইন মিটিংয়ে জুম অ্যাপ ব্যবহার করবেন যেভাবে..!


রোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ‘হোম অফিস বা ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চালু করেছে। এ কারণে বাসা থেকেই করতে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ। এমনকি মিটিংও সারতে হচ্ছে অনলাইনে। এক্ষেত্রে গত কয়েকদিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে জুম নামের অ্যাপটি। ভারতীয় প্রযুক্তি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম গেজেটসনাউ এক প্রতিবেদনে জানায়, উইন্ডোজ, আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের জন্য সমান কার্যকর জুম অ্যাপ। এর সাহায্যে মিটিং করা যাবে কোনও বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই।
জুম অ্যাপে মিটিং করার জন্য শুরুতেই আপনাকে ‘জুম ক্লাউড মিটিংস’ নামের অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে। অ্যাপ ডাউনলোডের সময় কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, জুম নামের অনেক অ্যাপ রয়েছে। এগুলো দিয়ে অনেক ধরনের কাজ করা যায়। আপনি মিটিংয়ের জন্য যে অ্যাপটি চাচ্ছেন সেটিই ডাউনলোড করুন।
জুম অ্যাপ ডাউনলোডের পর ইনস্টল প্রক্রিয়া শেষ হলে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। গুগল কিংবা ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সাহায্যেও জুম অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
জুম অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলার পর নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন
প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাইন ইন বাটনে চাপ দিন; লগইন হওয়ার পর চারটি অপশন পাওয়া যাবে, এগুলো হলো- নিউ মিটিং, জয়েন, শিডিউল এবং শেয়ার স্ক্রিন; নিউ মিটিং অপশন থেকে আপনি মিটিং শুরু করতে পারবেন, এই অপশন থেকে জুম আইডি, ইমেইল অ্যাড্রেস বা মিটিংয়ের নাম ব্যবহার করে যে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে; জয়েন অপশনের মাধ্যমে অন্য কারও আমন্ত্রণে কোনও মিটিংয়ে যোগ দেওয়া যাবে, এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে মিটিং আইডি ও পাসওয়ার্ড; মিটিংয়ের শিডিউলের জন্য শিডিউল অপশন ব্যবহার করতে হবে, অন্যদিকে প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে শেয়ার স্ক্রিন অপশন; মিটিং শেষ হলে নিচের ডান কোণে থাকা ‘এন্ড মিটিং’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।

mahbubmahin.blogspot.com এ প্রকাশিত।  
সুপার কম্পিউটার কি ?  সুপার কম্পিউটারের কাজ কি?     – বিস্তারিত ব্যাখ্যাঃ

সুপার কম্পিউটার কি ? সুপার কম্পিউটারের কাজ কি? – বিস্তারিত ব্যাখ্যাঃ

সুপার কম্পিউটার কি ?  সুপার কম্পিউটারের কাজ কি?
 – বিস্তারিত ব্যাখ্যাঃ


কম্পিউটার” শব্দটির সাথে আমরা খুব বেশি পরিচিত হলেও “সুপারকম্পিউটার” শব্দটি আমরা খুব কমই শুনেছি। অথবা খুব বেশি কিছু জানিও না। চলুন জেনে নেওয়া যাক অতিমাত্রায় শক্তিশালী এই কম্পিউটার সম্পর্কে।

সংঙ্গা: সাধারণভাবে আমাদের বাসা বাড়িতে বা অফিস আদালতে ব্যাবহৃত ছোট কম্পিউটারগুলো থেকে অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন এবং বৃহৎ আকারের কম্পিউটারকে সুপারকম্পিউটার বলা হয়।
এরা সাধারন কম্পিউটারগুলো থেকে অত্যন্ত ক্ষমতাসম্পন্ন এবং এদের আকৃতিও অনেক অনেক বড়। গড়ে একেকটি সুপারকম্পিউটার নির্মানে খরচ পড়ে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার এবং এর এক বছরের রক্ষনাবেক্ষন খরচ ৯ মিলিয়ন ডলার!! “টাইটান” নামের বিশ্বের অন্যতম বড় একটি সুপারকম্পিউটারের আকার প্রায় একটি বাস্কেটবল কোর্টের সমান। সাধারণ কম্পিউটারগুলো যেমন বাজারে কিনতে পাওয়া যায় এগুলো তেমন কিনতে পাওয়া যায় না এবং বিশ্বের খুব কম প্রতিষ্ঠানের কাছেই সুপারকম্পিউটার রয়েছে। বেশিরভাগই সরকার ভিত্তিক এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বৃহৎ হিসাবনিকাষে ব্যাবহৃত হয়। এগুলো রক্ষনাবেক্ষনেও প্রচুর খরচের প্রয়োজন পড়ে।

ক্ষমতা: সুপারকম্পিউটার সাধারণ কম্পিউটারগুলোর থেকে অতিমাত্রায় শক্তিশালী হয়ে থাকে। আমরা সাধারনত কোনো কম্পিউটারের গতি মাপার জন্য তাদের প্রসেসর কত হার্ট্জের এবং এটি প্রতি সেকেন্ডে কত মেগাবাইট/গিগাবাইট তথ্য প্রসেস করতে পারে তা নির্নয় করি। কিন্তু সুপারকম্পিউটারদের গতি/ক্ষমতা মাপার জন্য সম্পুর্ন ভিন্ন একটি একক ব্যাবহার করা হয়। এককটি হলো FLOPS(Floating Point Operation Per Second)। এটি প্রচলিত হিসাব পদ্ধতি থেকে সম্পুর্ন ভিন্ন এবং কেবলমাত্র বড় বড় প্রসেসিং মেশিন সমুহের গতি মাপার জন্যই ব্যাবহৃত হয়। চলুন FLOPS একক সম্পর্কে আপনাকে একটু ধারনা দেই- 1gigaFLOPS মানে হলো আপনাকে প্রায় ৩২ বছর ধরে প্রতি সেকেন্ডে একটি করে হিসাব করে যেতে হবে!! কোনো সুপারকম্পিউটার যদি এই কাজটি এক সেকেন্ডে করতে পারে তাহলে তার ক্ষমতা হবে 1gigaFLOPS. এরকমভাবে TeraFLOPS, PetaFLOPS এককগুলোও ব্যাবহার হয়। 1000gigaFLOPS=1TeraFLOPS 1000TeraFLOPS=1PetaFLOPS!! প্রতি সেকেন্ডে ১ টি করে হিসাব করলেও 1 পেটাফ্লপস যেতে আপনার ৩ কোটি বছর লাগবে!!! এপর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটারটি হলো Sunway TaihuLight এটি চীনে তৈরি এবং এর ক্ষমতা আশ্চর্যজনকভাবে প্রায় ৯৩ পেটাফ্লপস! যেটি এর আগের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটারটির থেকেও প্রায় তিনগুন বেশি। এখনো এর থেকেও বেশি শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার তৈরির চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

ব্যাবহার: সুপারকম্পিউটারের ক্ষমতা সম্পর্কে ভালোই জানা হলো, এবার মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে এত শক্তিশালী কম্পিউটার দিয়ে কি করা হয়? এদের প্রয়োজনই বা কি? আসলে প্রয়োজন ছাড়া পৃথিবীতে কোন জিনিসই তৈরি হয়না। যেখানে এত ব্যায়বহুল কম্পিউটারগুলোর কথা আসে তখন এদের প্রয়োগক্ষেত্রও কিন্তু বড় বড় জায়গাতেই। সাধারণত গানিতিক বিজ্ঞানে সবচেয়ে বেশি সুপারকম্পিউটার ব্যাবহৃত হয়। গনিতের অনেক বড় বড় হিসাবনিকাশ, বৃহত্তম মৌলিক সংখ্যা বের করা, অনেক বড় এবং সময়সাপেক্ষ অংক খুব কম সময়ের মধ্যে করা ইত্যাদি কাজে সুপারকম্পিউটার ব্যাবহৃত হয়। ল্যাবরেটরিতে গবেষনার কাজে, পদার্থবিজ্ঞানে কোয়ান্টাম মেকানিক্সে, আবহাওয়ার পুর্ভাবাস, জলবায়ু গবেষণা, এটমিক পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদি কাজে সুপারকম্পিউটার ব্যাবহৃত হয়। নাসা, সার্ন(CERN) এর মতো বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান জোতির্বিজ্ঞান এবং মলিকিউলার ফিজিক্সে খুব সুক্ষ হিসাবনিকাশের জন্যও সুপারকম্পিউটার ব্যাবহার করে। পৃথিবীতে কোন দেশে কতটি সুপারকম্পিউটার আছে তা ওই দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে আমেরিকা, জাপান এবং চায়না অনেক এগিয়ে আছে। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতও এগিয়ে যাচ্ছে।

ইতিহাস: পৃথিবীর প্রথম সুপারকম্পিউটার তৈরি করা হয় ১৯৬০ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টারে IBM 7030 Stretch এবং CDC(Control Data Corporation) এর কয়েকটি কম্পিউটার দ্বারা যার নাম ছিল অ্যাটলাস(Atlas) এবং এটি নির্মিত হয়েছিল সাইমর ক্রে নামের এক ব্যক্তির দ্বারা। IBM 7030 Stretch হলো ট্রান্সজিস্টর ব্যাবহার করা প্রথম কম্পিউটার। ১৯৬৪ সালে ক্রে CDC-6600 নামের একটি সুপারকম্পিউটার ডিজাইন করেন যা সিলিকন নির্মিত ট্রান্সজিস্টর ব্যাবহার করতো। প্রতিটি কম্পিউটার ৮ মিলিয়ন ডলার করে বিক্রি হয়েছিলো। ১৯৭৬ সালে ক্রে তার নিজের কোম্পানি “ক্রে রিসার্চ” থেকে Cray-1 নামের 80 MHz ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কম্পিউটার তৈরি করেন।

ILLIAC IV মডেলটি ক্রে ১ কে টেক্কা দেয় যার সর্বোচ্চ পিক পারফরম্যান্স ছিল 1gigaFLOPS. ১৯৮৫ সালে ক্রে ২ নামের আরেকটি কম্পিউটার আসে যা সর্বোচ্চ 1.9 gigaFLOPS গতিতে প্রসেসিং করতো কিন্তু এটি মস্কোতে অবস্থিত M-13 সুপারকম্পিউটারকে পেছনে ফেলতে পারেনি। মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কৃত হওয়ায় কম্পিউটার নির্মানে এবং এর গতি বৃদ্ধিতে বিপ্লব সৃষ্টি হয়। ১৯৮২ সালে জাপানে LINKS-1 নামের একটি সুপারকম্পিউটার প্রধানত গ্রাফিক্সের কাজে ব্যাবহার করার জন্য তৈরি করা হয় যাতে একসাথে ৫১৪টি মাইক্রোপ্রসেসর ব্যাবহৃত হয়েছিল। ১৯৯০ এর দিকে জাপান এবং আমেরিকায় হাজার বা এর অধিক মাইক্রোপ্রসেসরযুক্ত সুপারকম্পিউটার নির্মান শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে Hitachi SR2201 নামের ২০৪৮ টি প্রসেসরযুক্ত একটি সুপারকম্পিউটার ৬০০ gigaFLOPS গতি তুলতে সক্ষম হয়। এরপর থেকে অতিমাত্রায় সমান্তরাল প্রসেসর যুক্ত সুপারকম্পিউটার নির্মিত হতে থাকে। চায়না, জাপান, রাশিয়া ইত্যাদি দেশ তাদের নিজেদের জন্য শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার নির্মানে আগ্রহী হয়ে উঠে। বর্তমানে বিশ্বের সেরা দশটি সুপারকম্পিউটারের মধ্যে ৫টি আমেরিকার, ২টি চীনের, ১টি জাপানের এবং ১টি সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত। অবশ্য প্রথম তিনটির মধ্যে দুইটিই চীনের এবং তৃতীয়টি সুইজারল্যান্ডের।

নির্মানব্যায় এবং ব্যাবহৃত শক্তি: গড়ে একেকটি সুপারকম্পিউটার নির্মানে খরচ পড়ে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার এবং এর এক বছরের রক্ষনাবেক্ষন খরচ ৯ মিলিয়ন ডলার এবং এদের চালু রাখতেও কিন্তু ব্যাপক পরিমানে বিদ্যুতশক্তির প্রয়োজন পড়ে।Tianhe-1A যেটি কিনা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সুপারকম্পিউটার, এটি চালু রাখার জন্য ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়ে! সুপারকম্পিউটারগুলো রক্ষনাবেক্ষনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এদের ব্যাপকহারে তাপ নিঃসরন। একটি কম্পিউটার চালু অবস্থায় প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে যা ঠান্ডা করার জন্য ও প্রচুর ফ্যান/এসির প্রয়োজন হয়  এবং এতে প্রচুর বিদ্যুত শক্তির অপচয় ও হয়। যদিও এখন কম তাপ উৎপন্ন করে এমন প্রসেসর নির্মানের চেষ্টা চলছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে লিকুইড কুলিং সিস্টেম ব্যাবহৃত হয় যা ফ্যানের তুলনায় অনেক দ্রুত ঠান্ডা করতে সক্ষম। কিন্তু কম্পিউটারের মতো স্পর্শকাতর যন্ত্র ঠান্ডা করার জন্য পানি ব্যাবহার না করাই ভালো নয় কি?! আইসল্যান্ডে অবস্থিত একটি সুপারকম্পিউটারকে বলা হয় পৃথিবীর প্রথম জিরো এমিশন সুপারকম্পিউটার। এটি শতভাগ নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যাবহার করে এবং আইসল্যান্ডের ঠান্ডা আবহাওয়ার কারনে এটিকে কৃত্রিমভাবে ঠান্ডা করার প্রয়োজন পড়ে না।

অপারেটিং সিস্টেম: প্রথমদিকের সুপারকম্পিউটারগুলো তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহার করলেও ধীরে ধীরে তারা লিনাক্স(Linux) ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহার করতে শুরু করে। যেহেতু লিনাক্স একটি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার এবং যেকেউ ইচ্ছামতো একে মডিফাই করে ব্যাবহার করতে পারে। সর্বশেষ তথ্যমতে বিশ্বের সেরা ৫০০টি সুপারকম্পিউটারই লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহার করে!!

mahbubmahin.blogspot.com এ প্রকাশিত।